নিউজ ডেস্কঃ সবার জন্য বা ‘সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ আগামী ছয় মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নে শিগগিরই পৃথক আইন ও বিধি প্রণয়ন করা হবে। এখন আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। বুধবার অর্থনীতি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন জাতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উপহার। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। তারা মাসিক চাঁদা দেবেন, সরকারও কিছু অংশ দেবে। এখান থেকে যে তহবিল গঠিত হবে, সেই তহবিল লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হবে। ওই বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয় পেনশনভোগীদের লভ্যাংশ হারে দেয়া হবে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। সেটি প্রধনমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেসব অন্তর্ভূক্ত করে দ্রুতই সর্বজনীন পেনশন আইন প্রণণয়ন করা হবে।’
অভাবগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা রাষ্ট্রের অধিকার উল্লেখ করে তিনি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিষয়ে আরও বলেন, ‘এটি সবার জন্য করা হচ্ছে, আমাদের সংবিধানেও এ স্কিমের কথা বলা আছে।
সংবিধানে বলা আছে, বার্ধক্যজনিত কারণে যদি কোনো ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হন তাহলে তাকে সহায়তা করার অধিকার রাষ্ট্রের আছে। এটি প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার।’ এছাড়া বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারেও সবার জন্য পেনশন সুবিধার কথা বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ বছর। ২০৫০ সালে এটি বেড়ে হবে ৮০ বছর, ৬৫ সালে হবে ৮৫ বছর। এতে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি অবসরের পরও ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচবেন।’
এই সময়ে তাদের কোনো আয় থাকবে না, কিন্তু তারা বেঁচে থাকবেন। এদের দেখার কেউ নেই, কর্মক্ষমতাও নেই। আয় করতেও পারবে না। ফলে তাদের দায়িত্ব নেবে সরকার। এটা হবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে নির্ভরশীলতার হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০৫০ সালে তা ২৪ শতাংশে এবং ২০৭৫ সালে ৪৮ শতাংশে উন্নীত হবে। গড় আয়ু বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা বিবেচনায় আমাদের বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা হিসেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা খুবই জরুরি।’
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক এই পেনশনের আওতায় আসবেন বলে জানান তিনি। প্রবাসীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।
অর্থমন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদেরও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে পেনশনের আওতায় আনা হবে। চাঁদার পরিমাণ কত হবে এবং পেনশনভোগী কীভাবে কতোটা সুবিধা পাবেন তা নির্ধারণের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন অ্যাকাউন্ট অপরিবর্তিত থাকবে। ওই অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট জন যে পরিমাণ চাঁদা দেবে তার বাইরে একটি অংশ দেবে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসিক চাঁদা জমা দিতে হবে। এরপর মেয়াদ শেষে পেনশনভোগীদের সুবিধা দেয়া হবে। আমৃত্যু পেনশন সুবিধা বহাল থাকবে।
পেনশনের অর্থ এককালীন উত্তোলন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে। কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। পেনশনের টাকা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। পেনশনের টাকা নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করা হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ এই টাকা বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে।
Related Post:
করোনায় দেশে মৃত্যু বেড়ে ৩৪, বাড়লো শনাক্তও
বাংলাদেশের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জণে জাতিসংঘ সর্বদা সহযোগিতা দিয়ে যাবে, আশা অর্থমন্ত্রীর