জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৪৩৭.০৭ কোটি টাকায় চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণসহ ৪,২৪৬.৭২ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। চলতি অর্থবছরে একনেকের ৬ষ্ঠ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
একনেক সভা শেষে এনইসি সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে অবহিত করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কমিশনের সচিব ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মোট প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার ২৪৬.৭২ কোটি টাকার মধ্যে ৩,৬৩২.০১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে, ২০৫.৭৯ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এবং ৪০৮.৯২ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে। অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি নতুন এবং চারটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, তারা এখন প্রক্রিয়া করছেন এবং এইভাবে দ্রুত পদ্ধতিতে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছেন যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে। তিনি জানান যে এখন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে এবং পরিকল্পনা কমিশন স্থানীয় পর্যায়ের প্রকল্পগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।
সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক প্রসঙ্গে ড. মাহমুদ বলেন, রপ্তানি আয় আবার বাড়ছে এবং রেমিট্যান্সের অভ্যন্তরীণ প্রবাহেও গতি এসেছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে আরও তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ক্রমবর্ধমান প্রবণতায় রয়েছে। এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন যে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে।
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে ‘সুযোগের জানালা’ হিসেবে উল্লেখ করে ড. মাহমুদ বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশ এ ধরনের সুবিধা পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ করতে পারবে। তিনি আরও জানান যে সরকার পরিসংখ্যান আইন সংশোধন করতে পারে যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান ও মজুরি হার সম্পর্কিত নিজস্ব তথ্য প্রকাশের অনুমতি দিতে পারে।
আজকের সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল: মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ১,৫৩৮.১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সংরক্ষণ ড্রেজিং, অতিরিক্ত ১৬৯.৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জাহাজ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত), ১১৩.৮৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ে গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস এন্ড সেফটি সিস্টেম এবং ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) স্থাপন (৪র্থ সংশোধিত), ২৬৫.৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মসুর ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদার করা, ৪৯৯.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ৪৩৯.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে লোহার সেতু পুনর্নির্মাণ/পুনর্বসন (২য় সংশোধিত), ৬৪৬.৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ কূপ (অন্বেষণ কূপ) অনুসন্ধান প্রকল্প, ৬৮.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নেপালের লুম্বিনি সংরক্ষণ এলাকায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ মঠ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প এবং অতিরিক্ত ৬৮.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (চতুর্থ সংশোধিত)। এছাড়া পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যেই অনুমোদিত নয়টি প্রকল্পের বিষয়েও একনেক সভায় অবহিত করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।